

এশিয়া কাপে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনজুরি নিয়েও শেষে দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে নেমে পড়া তামিম ইকবালও প্রশংসা কুড়িয়েছেন বিস্তর। তবে রেকর্ডবুকেও নাম উঠেছে মুশফিক-তামিম জুটির। তামিম–মুশফিকের দেশপ্রেম ও সাহসিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত এখনো ক্রিকেটপ্রমীদের মুখে মুখে। সেই দৃষ্টান্ত এবার উঠে এলো এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে। ২০১৯ সালের বাংলা প্রথম পত্রে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের একটি উদ্দীপকে স্থান পেয়েছে মুশফিক–তামিমের বীরত্ব।
ওই উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ২ রান করে কব্জিতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান। মাঠে মুশফিক যেন একাই রুখে দাঁড়ান শ্রীলঙ্কার বোলাদের বিরুদ্ধে। ক্রিজের অন্যপ্রান্তে যখন শেষ ব্যাটসম্যান আউট হন, তখন পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে নামেন তামিম ইকবাল। এক হাতে ব্যাট চালিয়ে দেশের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন।
ইনিংসের ৪৬ ওভার ৫ বল পার হয়ে যাবার পর যখন উইকেটে এসেছিলেন তামিম তাঁর আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল এশিয়া কাপের বাকি অংশে আর খেলা হচ্ছেনা দেশসেরা এই ওপেনারের। তবুও দলের প্রয়োজনে নামেন তামিম, এক হাত লুকিয়ে রেখে বাকি হাত দিয়ে ব্যাট ধরে ঠেকিয়ে দেন এক বলও।
ঐ ঐতিহাসিক ম্যাচে বাংলাদেশ অলআউট ২২৯…লিখতে লিখতে থেমে যেত হলো সাংবাদিকদের। কী ব্যাপার, মুশফিক কেন ফিজের সঙ্গে বেরিয়ে এলেন না? কারণটা বোঝা গেল। অবাক বিস্ময়ে সবাই আবিষ্কার করল, তামিম এক হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে নেমে পড়ছেন মাঠে! তামিম নামার পর একাই আরও ৩২ রান তুললেন মুশফিক, স্কোরকার্ডে না লেখা থাকলেও ওই প্রতিটি রানে অবদান ছিল তামিমের। তামিম এদিন ২ রানে অপরাজিত ছিলেন না, ছিলেন ৩৪ রানে।
বাঁ-হাতে গ্লাভস পরা। কিন্তু দুটি আঙুল গ্লাভসের বাইরে। পুরো হাতে ব্যান্ডেজ করা। ড্রেসিংরুমে কিছুক্ষণ আগেও যিনি হাত ঝুলিয়ে রেখেছিলেন, সেই মানুষটি হঠাৎ ২২ গজের ক্রিজে! চোখে অবিশ্বাস্য মনে হলেও তামিম ইকবাল দেখিয়েছেন এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা। ইনিংসের শুরুতে সুরাঙ্গা লাকমলের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে কবজিতে ব্যথা পান তামিম। মাঠ থেকে যেতে হয় হাসপাতালে। এক্সরে রিপোর্টে তামিমের বাঁ কবজিতে চিড় ধরা পড়েছে। হাতে বাঁধা হয় মোটা ব্যান্ডেজ। কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। এই অবস্থায় ব্যাটিং করার কথা চিন্তা করাও অস্বাভাবিক। কিন্তু কিসের কি!
বাংলাদেশের ইনিংস শেষে খেলোয়াড়রা যখন মাঠের বাইরে যাচ্ছিলেন, তখন দর্শক তো বটেই শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়রাও তুমুল হাততালি দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশের যখন নয়টি উইকেট পড়ে গিয়েছে, তখন সেই আহত তামিমই মাঠে নামলেন।
যে লাকমলের বলে চোট পেয়েছিলেন, ফিরে এসে সেই লাকমলের বলকেই প্রথম খেললেন তামিম। এক হাতে ব্যাট ধরলেন। লেগ স্টাম্পের উপরে শট বলটি একহাতেই দারুণভাবে খেলেন তামিম। কিন্ত তিনি যেটা করেছেন, সেটাই তাকে ইতিহাসের খাতায় নিয়ে গেছে। দুই হাতে ব্যাট ধরার মতো অবস্থানে ছিলেন না।
তামিম দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নামার পর মুশফিকের সঙ্গে তার জুটি ৩২ রানের। এই রানই বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখলো বলতে হবে। তামিম শেষ পর্যন্ত ২ রানে অপরাজিত থেকে গেলেন। তামিম যদি আর না-ও খেলতে পারেন, আজ যে সুন্দরতম দৃশ্য উপহার দিয়েছেন, সেটি এই এশিয়া কাপ কেন, হৃদয়ে গেঁথে থাকবে বহুদিন। সময়ের তীব্র স্রোতও অনিন্দ্যসুন্দর এই দৃশ্য মুছতে পারবে না নিশ্চিত।