তিন বিভাগের খেলা ক্রিকেটে আপনাকে আধিপত্য দেখাতে হলে ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিনখানেই জ্বলে উঠতে হবে সমান করে। অথচ বাংলাদেশের এই দলটার মধ্যে সেই বালাই নেই। আক্ষেপ কম, না থাকা নিয়েও! অ্যান্টিগাতে যেখানে ব্যাট হাতে টানা ব্যর্থ তামিম-সাকিবরা সেখানে বেশ সাবলীল দেখা গেছে ব্র্যাথওয়েট-হোপদের। কম যাননি রোচ-গ্যাব্রিয়েলরাও, বোলিং শিখিয়েছেন রুবেল-রাব্বিদের।
চলছে বাংলাদেশ-উইন্ডিজের মধ্যকার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। যেখানে অ্যান্টিগাতে প্রথম টেস্টে ক্যারিবিয়ানদের অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে টাইগাররা। অথচ উইন্ডিজে পা দেওয়ার আগে ধরা হচ্ছিলো অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ২০০৯ এর সুখস্মৃতি আবার ফিরিয়ে আনবে বাংলাদেশ। অথচ ২০১৪ এর থেকে বিভীষিকাময় অবস্থা।
তবে টাইগারদের পাড় সমর্থকেরা হয়তো এমন কথাতে খেঁকিয়ে উঠতে পারেন কিছুটা। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে দুই টেস্টের সাথে তিন ওয়ানডে ও দুইটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ দল। তাইতো একটা মাত্র ম্যাচ দিয়েই দলটাকে দাঁড়িপাল্লাতে তোলাটা কতটা যৌক্তিক? রাখতে পারেন এমন প্রশ্নও।
প্রবাদ আছে ‘আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী’। সেই হিসাবে পূর্ণাঙ্গ এই সিরজের এখনো সবেমিলে ৬টা ম্যাচ বাকি থাকলেই এমন হতশ্রী শুরুর পর সহজেই অনুমান করে নেওয়া যায় বাকিটা সময় কি হতে চলছে। দেখতে দেখতে সাদা পোশাকে দেড় যুগের মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সময়ের বিবেচনাতে সংখ্যাটা নেহাত একেবারেই কম না। অথচ লাল বলের প্রতিটা সিরিজের আগেই কোন না কোন জুজু ঠিকই তাড়া করে বেড়ায়।
নিজেদের ঘরের মাঠেই স্পিন আক্রমণ দিয়ে প্রতিপক্ষকে কিছুটা শাসানো গেলেও প্রতিপক্ষের ডেরাতে পা রাখলেই পুড়তে হয় সেই স্পিন বিষেই। বাউন্সি উইকেট? সেটাতো এক অভিশাপের নাম। নিজেদের দাঁত হারানো পেস অ্যাটাক নিয়েই এই বিভাগে কাজ চালাতে হয় দায়সারাভাবে। ব্যাটিং দিয়ে কিছুটা সময় কাজ পাড়ি দেওয়া গেলেও এখন সবথেকে বড় আক্ষেপের নাম এই ব্যাটিংটাই।
বাংলাদেশ দলটা এখন এমন হয়েছে যে, প্রতি ম্যাচে হাতেগোনা চার থেকে পাঁচজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ছাড়া আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারছে না জুনিয়র ক্রিকেটাররা। ধারাবাহিকভাবে ফর্মহীন সৌম্য, সাব্বির, লিটন, মিরাজরা। ফলে দুই/এক সিরিজ বাদেই জায়গা হারাচ্ছেন দলে। হাতেগুনে যেকজন সিনিয়র ক্রিকেটার পারফর্ম করেন তারাও যখন ব্যর্থ হন তখন মুখ লুকানোর জায়গা থাকেনা কোথাও। লজ্জায় পড়তে হয়ে ৪৩ রানের!
ফিল্ডিংটাও যাচ্ছেতাই একদম, ক্যাচ ছাড়ার মহড়া যেন চলতেই থাকে। অথচ র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকা এই উইন্ডিজ উইকেট পিছনে কতটাইনা চনমনে, নিচ্ছেন চোখ ধাঁধানো সব ক্যাচ। এদিকে যেখানে ক্রিকেটিও হিসাবে গত ৪৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম রানে অল-আউট হয়েছে বাংলাদেশ, সেই একই পিচে কতটা না সাবলীল ব্যাটিং করেছেন ব্র্যাথওয়েট-হোপরা। এমনকি তাণ্ডবে বোলিংয়ে টাইগার ব্যাটিং লাইন-আপ ছারখার করা পেসার কেমার রোচও খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৫ রান করা লিটন দাসের থেকে ৮ রানের বড় ইনিংস।
প্রথম ইনিংসে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়ে আসা ব্যাটসম্যানরা একই পথে হাটছেন দ্বিতীয় ইনিংসেও। টেস্ট খেলার জন্য যে মনোযোগ, টেম্পারমেন্ট দরকার এর তার ছিটেফোটাও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না। এই ধরনের উইকেটে তারা খেলে না এটা ঠিক। এমন উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ও বল ছাড়াটা বেশ গুরুত্বপুর্ণ। অথচ এই জায়গাতে এসেই নিজেদের উইকেট বিলিয়ে মাশুল দিচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা।
ক্যারিবিয়ান পেসারদের সাথে যদি রুবেল-রাব্বিদের তুলনা করা হয় তবে যোজন যোজন এগিয়ে রাখতে হবে রোচ-গ্যাব্রিয়েলদের। প্রথম ইনিংসে আগুণ ঝরানো রোচ দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে নেননি চোটের কারণে। তাতে অবশ্য আফসোসে পুড়তে হচ্ছে না ক্যারিবিয়ানদের। রোচের সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন গ্যাব্রিয়েল। আগের ইনিংসে রোচের সাথে জুটি গড়া পেসার কামিন্সের দায়িত্বটা বুঝে নিয়েছেন অধিনায়ক হোল্ডার নিজেই।
টেস্টের মাত্র দুই দিন অতিবাহিত হয়েছে ইতোমধ্যে। যার পুরোটা সময় শাসন করেছে উইন্ডিজ দল। এই টেস্টে বাংলাদেশের যেন একটাই একুতি, কোনমতে ম্যাচটা শেষ হলেই বাঁচা যায় হাফ ছেড়ে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হতে এখনো ৬ দিনের অপেক্ষা। প্রথম টেস্টে ব্র্যাথওয়েট-রোচদের কাছ থেকে শেখা ক্রিকেটটা সেই ম্যাচে কাজে লাগাতে পারবে কি টাইগাররা? সেই প্রশ্নটাই আপতত তোলা থাকলো।
লেখা: তরিকুল ইসলাম সজল।