‘টেস্ট ক্রিকেট ইজ দ্যা বেস্ট ক্রিকেট’, এই মহান উক্তি সবাই জানেন, সবাই স্বীকার করেন যে- ‘এটা আমরা মানি’ কিন্তু ক্রিকেটের বিশ্বায়নে টি-টোয়েন্টিকে প্রথম প্রায়্যোরিটি লিস্ট হিসেবে অলিখিত খেতাব দেওয়ার ফলে স্বয়ং আইসিসিও এখন এই মহান উক্তি বিশ্বাস করেন কিনা সন্দেহ আছে!
আইসিসি টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে কিছুদিন থেকে প্রচুর ঘষামাজা শুরু করেছে। যারমধ্যে কিছু ঘষামাজা আমার কাছে বেশ অর্থপূর্ণই মনে হয়েছে, এজন্য আইসিসিকে সাধুবাদ।
১.
ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ: অসাধারণ একটা উদ্যোগ বলতেই হয়। দুই বছরের সার্কেলে একেকটা চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে টেস্ট মর্যাদাপ্রাপ্ত ১২ টা দেশ থেকে ৯ টা দেশ খেলার সুযোগ পাবে। এরমানে হচ্ছে জিম্বাবুয়ে,আয়ারল্যান্ড,আফগানিস্তান এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলতে পারছেনা,যেটা আবার আমার কাছে খুব একটা উপযোগী মনে হয়নি।
এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসর শুরু হচ্ছে ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণকারী ৯ টা দল, মোট ২৭ টা সিরিজ খেলবে। প্রতিটা দল হোম আর অ্যাওয়ে ভিত্তিক ৩ টা করে সিরিজ খেলবে এবং প্রতিটা সিরিজে কমপক্ষে ২ টা, সর্বোচ্চ ৫ টা করে ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে। লিগের সর্বোচ্চ পয়েন্ট সংগ্রহকারী ২ টা দল ফাইনাল খেলার সুযোগ পাবে। ২০২১ ও ২০২৩ সালে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবার কথা রয়েছে ইংল্যান্ডে। যদি ফাইনাল ড্র বা টাই হয়ে যায়, তাহলে সর্বোচ্চ পয়েন্টপ্রাপ্ত দল চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করবে।
২.
টসপ্রথা ক্রিকেটের অতি প্রাচীন একটি বিষয়। দুইটি দলের মধ্যে কে আগে ব্যাটিং করবে বা কে আগে ফিল্ডিং করবে,সেটা নির্ধারণ করা হতো টসের মাধ্যমে। কিন্তু আইসিসির ভাষ্যমতে, ‘টেস্ট ক্রিকেট থেকে টসপ্রথা বাতিল হওয়া প্রয়োজন। টসের মাধ্যমে ‘হোম’ (স্বাগতিক) টিম বেশি সুবিধা ভোগ করে এবং সফরকারী দল কম সুবিধা পাচ্ছে।’
কিন্তু এতদিন পরে কেন আইসিসির এই ধারণা হলো, সেটা বোঝা গেল না। ক্রিকেট সংস্কৃতির সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত টসপ্রথা, যেটা প্রায় বাতিলের ঘোষণাই দিয়ে দিয়েছে আইসিসি। আইসিসির নতুন সিদ্ধান্ত আসছে, সফরকারী দল ঠিক করবে,তারা আগে ফিল্ডিং করবে না আগে ব্যাটিং করবে। যার মাধ্যমে এই চিরাচরিত টসপ্রথার বাতিল অনেকটা নিশ্চিতই বলা যায়।
৩.
দিবা-রাত্রির টেস্ট নিয়েও চলছে সংশয়। অস্ট্রেলিয়া সফরে দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে ভারত। কিন্ত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রতি হোম সিরিজেই একটি করে দিবা-রাত্রির টেস্ট থাকছে, এরকমটাই সিদ্ধান্ত আইসিসির।
৪.
টেস্ট থাকছে পাঁচদিনেরই। যদিও সাউথ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে একটি চারদিনের টেস্ট ম্যাচ হয়েছিল কিন্তু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সব ম্যাচ পাঁচদিনেরই হচ্ছে।
সত্যি বলতে টেস্টের সৌন্দর্য্যটাই অন্যরকম। এখানে মাঠ দেখতে ভাল লাগে, পিচ দেখতে ভাল লাগে, বল দেখতে ভাল লাগে, ব্যাটিং দেখতেও ভাল লাগে এমনকি এখানে যে এগ্রেসিভনেসটা থাকে সেটা দেখতেও অনেক বেশি ভাল লাগে। ক্রিকেটের শুরুটা যে ফরম্যাটে, সেই ফরম্যাটকে বাঁচিয়ে রাখা দায়িত্ব-কর্তব্য। দিন যাবে,নতুনত্ব আসবে, টি-টোয়েন্টি থেকে টি-টেন হয়ে যাবে, তাই বলে ক্রিকেটের রুট ভেঙ্গে দিলে,সেটা আর কখনো ক্রিকেট থাকবেনা। আইসিসি কি চিন্তা করছে বা করে আমার জানা নেই। কয়েকদিন পর পরই তাদের সভা বসে আর বিভিন্নরকমের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যার ভাল-খারাপ জাস্টিফাই করার দরকার আজ না পড়লেও, কয়েকদিন বাদে ঠিকই পড়বে, সেদিন আর ‘সাধন’ হবেনা।