

বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) উদ্যোগে উদযাপন করা হয়েছে ঐতিহাসিক ‘বাংলাদেশ বনাম এমসিসি’ ম্যাচের ৪০ বছর পূর্তি। রাজধানীর বিজিএমইএ ভবনের মিলনায়তনে ২৪শে ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের হয়ে খেলা ক্রিকেটার ও সংগঠকদের সম্মানিত করা হয়।
১৯৭৭ সালের ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ৩ দিনের প্রথম একটা টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিলো ক্লার্কের নেতৃত্বে বাংলাদেশে সফরকারী ইংল্যান্ডের শক্তিশালী এমসিসি দলের বিরুদ্ধে। ওটাই ছিলো অলিখিত প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।

ঢাকায় ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে খেলার সুযোগ হয় শামীম কবির (অধিনায়ক), রকিবুল হাসান, মাঈনুল হক, সৈয়দ আশরাফুল হক, ওমর খালেদ রুমি, এ.এস.এম.ফারুক, শফিকুল হক হীরা, ইউসুফ রহমান বাবু, দৌলতউজ্জামান, দীপু রায় চৌধুরী ও নজরুল কাদের লিন্টু এই এগার জনের। এছাড়া ১৬ জনের দলে ছিলেন শাকিল কাশেম, এনায়েত হোসেন সিরাজ, খবির, নাজমুর নুর রবিন ও আহমেদ ইকবাল বাচ্চু।
তিন দিনের ঐ টেস্টে বাংলাদেশ দল শক্তিশালী এমসিসির বিপক্ষে ড্র করে। ব্যাট হাতে ইউসুফ রহমান বাবু (৭৮), শামীম কবির (৩০ ও ২৫), ওমর খালেদ রুমি (২৮ ও ৩২) অবদান রাখেন। বল হাতে নজরুল কাদের লিন্টু ৪ , দৌলতউজ্জামান ৩ ও দীপু রায় চৌধুরী ২ উইকেট পান।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সামনে এগিয়ে নিতে ঐ ম্যাচের ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য। মূলত ঐ ম্যাচের খেলোয়াড় ও ঐ ম্যাচ সম্পর্কিত সবাইকে সম্মান জানাতেই বাংলাদেশের স্বীকৃত সমর্থক গোষ্ঠী বিসিএসএ এই আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছিলো বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়া সার্বিক সহযোগিতায় ছিলো স্পোর্টস ফিউশন, বিসিএসএ ইউকে, ক্রিকেট৯৭ ও টোটাল প্লাস লিমিটেড।

বিসিএসএ’র এই আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন ঐতিহাসিক ঐ ম্যাচের জন্য নির্বাচিত ১৬ সদস্যের ৮ সদস্য; তারা হলেন সৈয়দ আশরাফুল হক, ইউসুফ রহমান বাবু, এ এস এম ফারুক, শাকিল কাশেম, দীপু রায় চৌধুরী, এনায়েত হোসেন সিরাজ, শফিকুল হক হিরা ও মাইনুল হক। এছাড়া তৎকালীন ক্রীড়া সংগঠক রাইসউদ্দীন আহমেদ, প্রথিতযশা ক্রীড়া সাংবাদিক কামরুজ্জামান, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব জালাল চৌধুরী, জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত ও মিডিয়া কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হয়ে ছিলেন বাংলাদেশের হয়ে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির মালিক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কাজী সাবির। দর্শকসারিতে উপস্থিত ছিলো পঞ্চাশ জনের মতো বিসিএসএ’র সদস্য।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বক্তব্য রাখেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বিনয়ী আমিনুল ইসলাম বুলবুল পুরো বক্তব্য জুড়ে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটে ঐ ম্যাচ ও ঐ ম্যাচের সাথে সম্পৃক্ত সবার অবদানের কথা।
এরপর একে একে স্মৃতি রোমন্থন করেন ৪০ বছর আগে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ঐতিহাসিক ঐ ম্যাচের অংশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ৮ ক্রিকেটার। স্মৃতি রোমন্থনের এক পর্যায়ে বন্ধু জুয়েলকে (শহীদ জুয়েল) স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সৈয়দ আশরাফুল হক। তিনি বলেন, “ এই যে ছবি দেখছেন, এখানে ১৬ জন ক্রিকেটার ছিলাম আমরা। আমি বিশ্বাস করি অনায়াসে এই ১৬ জনের একজন হতে পারতো জুয়েল।”
উল্লেখ্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হন ক্রিকেটার জুয়েল। যার নামানুসারে শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারির একটি অংশের নাম দেওয়া হয়েছে শহীদ জুয়েল স্ট্যান্ড।

অতিথিদের বক্তব্য শেষে তাদের হাতে সম্মানসূচক ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। অতিথিরা তাদের প্রতি এই সম্মান প্রদর্শন ও তাদের অবদানকে স্মরণ করার বিসিএসএ’র এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানান।