

আগের ইনিংসে মারক্রাম ফিরেছিলেন শতকের দ্বারপ্রান্ত থেকে। আর এলগারের দুঃখটা ছিল এক রানের, ১৯৯ রানে সাজঘরে ফিরে পাওয়া হয়নি প্রথম টেস্ট দ্বিশতকের দেখা। দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি শুরু করতে চেয়েছিলেন যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই। তবে এবার আর এই যুগলকে সুযোগটা দেয়নি টাইগার বোলাররা। তৃতীয় দিনশেষে দুজনকেই ফেরানো গেছে।
পচেফস্ট্রুম টেস্টের তৃতীয় দিনে অবশ্য খেলা হয়নি পুরো দিন। আলোর স্বল্পতায় ১৫ ওভার আগেই শিবিরে ফিরেছে দুই দল। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ থেমেছে ৩২০ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৫৪ রান। প্রোটিয়ারা এগিয়ে আছে ২৩০ রানে।
ক্যারিয়ারে প্রথমবার পাঁচে নেমে তামিম ইকবাল দিন শুরু করেছিলেন মুমিনুল হককে নিয়ে। শুরু থেকেই ছন্দটা কেমন যেন খুঁজে পাচ্ছিলেন না সহ-অধিনায়ক। রাবাদা, মরকেলদের ইয়র্কারে মাটিতে লুটিয়েছেন দু’বার। ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া শুরু হয়েছিল তখনই।
আগের দিনের ৩ উইকেটে ১২৭ রানের সঙ্গে আরও ৩১ রান যখন দলের স্কোরকার্ডে তামিম তখনই ফিরেছেন অভিষিক্ত ফেলুকওয়ায়োর বলে। কুইন্টন ডি ককের হাতে ক্যাচ জমিয়ে ৩৯ রানে সাজঘরে তামিম। চতুর্থ উইকেট জুটিতে মুমিনুলের সঙ্গে যোগ করেছেন ৫৫ রান।
ছন্দে থাকা মুমিনুল খেলেছেন নিজের মতই। ঢাকা টেস্টে দলে ছিলেন না, সে নিয়ে সমালোচনা আলোচনা কম ছিলনা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে নিজের প্রথম অর্ধশতকটা তুলে নিয়ে মুমিনুল কিন্তু জবাবটা দিয়েছেন ব্যাট দিয়েই। ১১২ বলে ৯ চারে দেখা পেয়েছেন ফিফটির।
মুমিনুল আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দুজনই দল থেকে বাদ গিয়েছিলেন বাংলাদেশের শততম টেস্টে। সুযোগ পেয়ে কিনা সেই দুজনই গড়লেন দলীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের জুটি! ৬৯ রানের স্বস্তিদায়ক জুটি গড়ে দলকে আস্তে আস্তে দেখাচ্ছিলেন পথের দিশা।
হঠাৎই ছন্দপতন মুমিনুলের! হালকা ব্যাকফুটে এসে বলটাকে চেয়েছিলেন লেগ সাইডে পাঠাতে। কেশব মহারাজের বলে বাউন্সটা একটু অপ্রত্যাশিত ছিল বোধহয়, তাই যেখানে যাওয়ার বলটা যায়নি সেখানে। শর্ট লেগে থাকা মারক্রামের হাত লুফে নিয়েছে মুমিনুলের ক্যাচটা। ১৫০ বলে ১২ চারে ৭৭ রানে কাটা পড়ে শিবির ফিরলেন মুমিনুল।
মুমিনুল তো দেখা পেলেন অর্ধশতকের। এবার পালা সাকিব আল হাসানের বিশ্রামে দলে ঢোকা রিয়াদের। শেষ কয়েক ইনিংসে যার ব্যাট কথা বলেনি প্রত্যাশামত। ফেরার ম্যাচে রিয়াদের ব্যাটেও হাসলো দারুণ এক অর্ধশতক। আর সাব্বির রহমানকে সঙ্গে নিয়ে ৬৫ রানের জুটিও গড়লেন ৬ষ্ঠ উইকেটে।
এরপরই মড়কটা লেগেছে বাংলাদেশের ইনিংসে। প্রস্তুতি ম্যাচের দুই ইনিংসে দুই ফিফটির দেখা পাওয়া সাব্বিরের বিদায় ব্যক্তিগত ৩০ রানে। পরের ২৮ রানে সব উইকেট হারিয়ে সাজঘরে টাইগাররা। ১২৪ বলে ১১ চার আর এক শতকে ৬৬ রানে রিয়াদকে থামিয়েছেন মরকেল। মেহেদী হাসান মিরাজও করেছেন হতাশ। দ্রুত উইকেট পতনে ৩২০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ২৫২ রান। আর নয় বছর পর প্রোটিয়াভূমে নেমেই টাইগাররা গড়েছে ৩২০ রানের নতুন রেকর্ড। চট্টগ্রামে ২০১৫ সালে স্কোরবোর্ডে তোলা ৩২৬ রান যেকোন মাঠেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ।
কেশব মহারাজ নিয়েছেন তিন উইকেট। দুটি করে উইকেট গিয়েছে রাবাদা আর মরকেলের ঝুলিতে। অভিষেকেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন আন্দিলে ফেলুকওয়ায়ো।
শেষ সেশনের বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্বস্তিটা বোধহয় বোলারদের ফিরে আসা। শফিউল ইসলামের বলে লাইন মিস করে ডিন এলগার ফিরেছেন লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে।
আরও ৮ রান যোগ হতেই বাংলাদেশ ফের আঘাত হানে স্বাগতিক শিবিরে। এবারে বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। প্রিয় অস্ত্র কাটারে তুলে নেন অভিষিক্ত এইডেন মারক্রামকে। ৩৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার নেই দুই উইকেট।
বাকি দিনটা অবশ্য হাসিম আমলা আর টেন্ডা বাভুমার তেমন একটা খেলতেই হয়নি। চারপাশ অন্ধকার হয়ে যাওয়াতে সেনওয়েস পার্কের ফ্লাডলাইট গুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু এরপরেও লাল বলটা ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিলেন না আমলারা। তাই তৃতীয় দিনের যবনিকাপাত সেখানেই।
শেষ বিকেলের বোলিংটা থেকেই ম্যাচে ফিরে আসার অনুপ্রেরণাটা নিতে পারেন মুস্তাফিজ-তাসকিনরা। চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই যদি চেপে বসা যায় স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের ঘাড়ে, তবে নয় বছর পর প্রোটিয়াভূমে খেলতে নামা টেস্টটার শেষটা হতে পারে অন্যরকমও!
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ডঃ
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংসঃ ৪৯৬/৩ (১৪৬ ওভার; ইনিংস ঘোষণা)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংসঃ ৩২০/১০ (৮৯.১ ওভার) মুমিনুল ৭৭, রিয়াদ ৬৬, মুশফিক ৪৪, তামিম ৩৯, সাব্বির ৩০, লিটন ২৫। কেশব ৩/৯২, মর্কেল ২/৫১, রাবাদা ২/৮৪
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংসঃ ৫৪/২ (১৫.৫ ওভার) এলগার ১৮, আমলা ১৭*, মারক্রাম ১৫, বাভুমা ৩। মুস্তাফিজ ১/৭, শফিউল ১/১৮