

দলের যখন দারুণ বিপর্যয়, ব্যাট হাতে হয়েছিলেন ত্রাতা। বল হাতে এসেই শিকার করেছেন দুই উইকেট। আর হার্ডিক পান্ডের এমন দারুণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম ম্যাচ জিতে সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে এগিয়েছে স্বাগতিক ভারত।
অভিজ্ঞ মহেন্দ্র সিং ধোনি এবং হার্ডিকের দুর্দান্ত দুই অর্ধশতক আর ম্যাচ বাঁচানো জুটিতে ভারতের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ২৮১ রান। বৃষ্টির বাধায় ক্যাঙ্গারুদের সামনে নতুন লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয় ২১ ওভারে ১৬৪। নির্ধারিত ওভারে স্মিথের দল ১৩৭ রান সংগ্রহ করলে ভারত ২৬ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে।
চেন্নাইতে এদিন টস জিতে ভারতীয় অধিনায়ক ভিরাট কোহলি বেছে নেন ব্যাটিং। আর নেমেই স্বাগতিকরা পড়ে কোল্টার-নিলের বোলিং তোপের সামনে। ১১ রানে ভারত হারিয়ে ফেলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের দারুণ এক ক্যাচে ভিরাট কোহলিকে ফিরতে হয় শূন্য হাতেই।
কেদার যাদবকে সঙ্গে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার মিছিলটা প্রথম শুরু করেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা। তবে দুজনকেই ফিরিয়েছেন অজি অলরাউন্ডার মার্ক স্টইনিস। ৮৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ঘরের মাঠে ভারত তখন কাঁপছে রীতিমত।
পুরোনো সৈনিক মহেন্দ্র সিং ধোনি, হার্ডিক পান্ডেকে একপাশে নিয়ে গড়তে শুরু করেন ভারতের ভিত। এক পর্যায়ে ধোনিকেও ছাপিয়ে যান পান্ডে। ৬৬ বলে ৮৩ রানের এক মারকুটে ইনিংস খেলে হার্ডিক যতক্ষণে সাজঘরের রাস্তায়, ভারত তখন দাঁড়িয়ে আছে শক্ত ভিতের উপর।
অ্যাডাম জাম্পার এক ওভারে পান্ডে তুলেছেন ২৪ রান। ঐ ওভারের তিন ছয় ছাড়াও হাঁকিয়েছেন আরও দুইটি ছক্কা। সব মিলিয়ে ৫ চার আর ৫ ছয়ে হার্ডিক পান্ডে সাজিয়েছেন নিজের ইনিংস।
হার্ডিকের ঝড় থামানো গেলেও ধোনি অতন্দ্র প্রহরী হয়েই রয়ে যান একদম শেষ ওভার পর্যন্ত। ওয়ানডেতে নিজের শততম অর্ধশতক তুলে নেয়ার দিনে ধোনির শুরুটা ছিল সাবধানী।
ম্যাচের পরিস্থিতি পাল্টানোর সাথে সাথে পাল্টাতে থাকে ধোনির ব্যাটের গতিও। প্রথম চারের দেখা পেতে যিনি সময় নিয়েছেন ৬৭ বল, সেই ধোনিই ফিরে যাওয়ার আগে ৮৮ বলে ৪ চার আর ২ ছক্কায় করেছেন ৭৯ রান। সাথে দুয়ার খুলেছেন একশো স্টাম্পিং আর একশো অর্ধশতক হাঁকানোর এক নতুন ক্লাবের, যেখানে তিনিই একমাত্র!
ভারতের ইনিংস শেষ হতেই শুরু হয় বৃষ্টির তান্ডব। মাঝে বৃষ্টি থামায় অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্য নির্ধারিত হয় ৩৭ ওভারে ২৩৮। ফের বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যখন আবার শুরু, অজিদের লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারিত হয় নতুন করে। এবার, লক্ষ্য ২১ ওভারে ১৬৪!
ব্যাটিংয়ে নেমেই নিজের প্রথম ম্যাচেই খালি হাতে ফেরার তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে জশপ্রীত বুমরাহর বলে বিদায় নেন হিল্টন কার্টরাইট। ব্যাট হাতে দুরন্ত পান্ডে বল হাতেও নিংড়ে দেন নিজের সেরাটা। নিজের করা প্রথম ওভারে একে একে বিদায় করেন স্টিভেন স্মিথ আর ট্রেভিস হেডকে। ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে আশা জাগলেও কুলদিপ যাদভের বলে ফিরেছেন অস্ট্রেলীয় উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানও।
গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের খানিক সময়ের ঝড়ে অস্ট্রেলিয়ার আকাশে রোদের উঁকিঝুঁকি দেখা দিলেও যুবেন্দ্র চাহালের বলে ম্যাক্সওয়েলের ফিরে যাওয়ায় কালো মেঘে আবারও ঢেকে যায় অজিদের ইনিংস। অবশ্য এর আগে কুলদিপ যাদবের এক ওভারে মোটামুটি টর্নেডোই বইয়ে দিয়েছিলেন ম্যাক্সি। হাঁকিয়েছেন এক চার আর টানা তিন ছয়। দলের সর্বোচ্চ স্কোরও ম্যাক্সওয়েলেরই, ৩৯।
শেষদিকে ফকনারের ব্যাট শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমিয়েছে। বল হাতে উইকেটের দেখা পেয়েছেন সব ভারতীয় বোলারই। চাহাল নিয়েছেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। দুটি করে উইকেট পেয়েছেন পান্ডে আর কুলদিপ। একটি করে উইকেট গিয়েছে দুই উদ্বোধনী পেসার ভুবনেশ্বর কুমার আর জশপ্রীত বুমরাহর ঝুলিতে।
হার্ডিক পান্ডের ব্যাট আর বল হাতের অনবদ্য নৈপুণ্য নির্বাচকদের একবারও ভাবায়নি ম্যাচ সেরা বেছে নেয়ার জন্য। পান্ডেকেই দেয়া হয়েছে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
ভারতঃ ২৮১/৭ (৫০ ওভার) পান্ডে ৮৩, ধোনি ৭৯, কেদার ৪০, ভুবনেশ্বর ৩২*, রোহিত ২৮। কোল্টার-নিল ৩/৪৪, স্টয়নিস ২/৫৪
অস্ট্রেলিয়াঃ (লক্ষ্য- ২১ ওভারে ১৬৪ রান) ১৩৭/৯ (২১ ওভার) ম্যাক্সওয়েল ৩৯, ফকনার ৩২*, ওয়ার্নার ২৫। চাহাল ৩/৩০, হার্ডিক ২/২৮ কুলদিপ ২/৩৩
ফলাফলঃ ভারত ২৬ রানে জয়ী।
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচঃ হার্ডিক পান্ডে (ভারত)।