সৌম্য শোনালেন নিদাহাসের ফাইনালে শেষ ওভার করার অভিজ্ঞতা

সৌম্য সরকার দীনেশ কার্তিক ওয়াশিংটন সুন্দর মুস্তাফিজুর রহমান নিদাহাস ট্রফি

দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যে কয়টি ম্যাচ হারের ক্ষত এখনো কোটি ভক্ত হৃদয়ে তাজা তার একটি নিশ্চিতভাবেই ২০১৮ সালে ভারতের বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে হার। হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটি দীনেশ কার্তিকের ৮ বলে ২৮* রানের অতিমানবীয় এক ইনিংসে হারতে হয় টাইগারদের।

শেষ ওভারে ১২ রান ও শেষ বলে ৫ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের, খন্ডকালীন বোলার সৌম্য সরকারের করা রোমাঞ্চে মোড়ানো ওভারের শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে শেষ হাসি হাসে ভারতীয় শিবির। সৌম্য সরকার জানালেন ওভারটি করতে গিয়ে কি ভাবনা কাজ করেছিল তার মাথায়, কীভাবে সামলেছেন কঠিন সেই পরিস্থিতি।

করোনা ভাইরাসের প্রভাবে গৃহবন্দী সময়টা উপভোগ্য করে তুলতে টাইগারদেরর নয়া ওয়ানডে কাপ্তান তামিম ইকবাল নিয়মিত আড্ডা দিচ্ছেন ফেসবুক লাইভে। গতকাল (১৬ মে) তার অতিথি হিসেবে ছিলেন সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস ও মুমিনুল হক, পরে যোগ দেন তাইজুল ইসলামও। আড্ডার এক পর্যায়ে সৌম্যকে উদ্দেশ্য করে তামিম নিদাহাস ট্রফি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। সৌম্যও ঐ পরিস্থিতির বিস্তারিত বর্ণনা দেন।

সৌম্যকে উদ্দেশ্য করে তামিমের প্রশ্ন, ‘নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভারে আসলে কি হয়েছিল? যদিও আমি তোকে বোলার হিসেবে কখনোই গুনিনা। আমি মনে করিনা তুই জাতের কোন বোলার বা এরকম কিছু। কিন্তু তুই যেকোনভাবে মাঝে মাঝে ভালো বল করিস (হাসি)। তো নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভারে কি চলছিল তোর মাথায় বা কে এসে কি বলেছিল তোকে কিংবা ঐ শেষ বলটায় কি হয়েছিল যদি একটু ব্যাখ্যা করতি।’

জবাবে সৌম্য বলেন, ‘প্রথম যখন সাকিব ভাই আমাকে বল দিয়েছে তখন আমার মধ্যে এত কিছু ছিল না যে এত দিতে হবে। শুধু মাথায় ছিল যে আমার একটা ওভার বোলিং করতে হবে। এর আগে আমি যখন প্রিমিয়ার লিগে পাঁচ বছর খেলেছিলাম তখন আমাকে যখন কঠিন সময়ে বল দিতো, ধরুন এক ওভারে লক্ষ্য ৮ রান দিতে পারবো, এর বেশি না। আমার কাছে নিদাহাস ট্রফির শেষ ওভারেও সেই বিষয়টি মনে পড়েছে।’

‘আমি যখন প্রথম তিন ওভার বল করেছি তখন কিছু মনে হয়নি। হেরে যাবো নাকি জিতে যাবো আমার মাথায় এসব কিছুই ছিল না। আমার খালি পরিকল্পনা ছিল যে এক জায়গায় বল করবো। তিন নম্বর বলের সময় সবাই বলছে তুই পারবি। কিন্তু আমি কোনো টেনশন নিচ্ছি না। হঠাৎ করে আমি পানি আনতে বলি। এরপর মুখটা ধোয়ার পর কয়েকজন পাশে এসেছে এবং বলেছে যে তুই পারবি, টেনশন করিস না। তখনই আমার মধ্যে টেনশন ঢুকে গেছে যে পারবো কিনা।’

ওভারে মাঝখানে কে তাকে পানি এনে দিয়েছিল সেটি অবশ্য খেয়াল করেননি সৌম্য, ‘সেই ব্যক্তিটা কে ছিল ঠিক খেয়াল নেই, তবে ১২তম খেলোয়াড় ছিল। এরপরেই আমার মধ্যে চিন্তা এসেছে। চার নম্বর বলটি যখন সবচেয়ে ভালো করলাম যেটা চার হয়ে গেল থার্ডম্যান দিয়ে। চার হওয়ার পর সাকিব ভাই দৌড়িয়ে আসে এবং বলে যে তোর হিরো হওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু জিরো হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ তুই প্রধান বোলার না। তুই যদি বাংলাদেশকে জেতাতে পারিস তাহলে হিরো হবি।’

শেষ দুই বলে প্রয়োজন ৫ রান , ক্রিজে অস্বস্তিতে ভোগা বিজয় শঙ্কর ফিরেছেন পঞ্চম বলে, ক্যাচ নিয়েছেন মিরাজ-সাব্বির দুজন মিলে। আর এটিই কাল হয়েছে বাংলাদেশের জন্য, ততক্ষণে প্রান্ত বদল করে স্ট্রাইকে রুদ্রমুর্তি ধারণ করা দীনেশ কার্তিক। ৭ বলে ২২ রান করা কার্তিক শেষ বলে হাঁকিয়ে দেন ছক্কা।

শেষ দুই বলের কাহিনী জানাতে গিয়ে এই মিডিয়াম পেসার যোগ করেন, ‘আমি পাঁচ নম্বর বল করতে গিয়েছি। সেই বলে আউট করেছিলাম বিজয় শঙ্করকে। সাব্বির এবং মিরাজ মিলে ক্যাচটি ধরেছিল। পরে আমার কাছে মনে হয়েছে যে ক্যাচটি না ধরলে ভালো হতো। দুই রান হলে বিজয় শঙ্কর স্ট্রাইকে থাকতো।’

‘ওই সময়টায় চিন্তা বেশি এসেছে যে শেষ বল, পাঁচ রান দরকার কি করা যায়। সেসময় আমার কারো দিকে মনোযোগ ছিল না। মুশফিক ভাই বলেছে ওয়াইড ইয়র্কার কর। আমি যদি ওয়াইড ইয়র্কার মারি তাহলে খুব বেশি হলে চার হবে। ব্যাটে ভালোভাবে লাগলে কাভারের উপর দিয়ে চার হওয়ার সুযোগ। এরপরেও আমি সেফ থাকছি। এটাই আমার লক্ষ্য ছিল।’

৯৭ প্রতিবেদক

Read Previous

কঠিন সময়ে মাশরাফির অবদানের কথা সামনে আনলেন লিটন

Read Next

তামিমের ‘খুবই স্পেশাল’ অতিথি ভিরাট কোহলি

Total
0
Share