ম্যাচটা শুরু হওয়ার আগে সম্ভাবনা ছিল সিরিজ জয়ের। সেটা হোক ড্র করে কিংবা জিতে। কিন্তু প্রতিপক্ষ তো অস্ট্রেলিয়া! যেকোন পরিস্থিতিতে তাদের মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন স্বয়ং সাকিব আল হাসানই। সেই মানিয়ে নেয়ার জোরেই চট্টগ্রাম টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জিতে নিয়েছে সাত উইকেটে।
তবে ঘরের মাঠে সিরিজ হারতে হয়নি টাইগারদের। ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা দুই টেস্ট সিরিজই টাইগাররা ভাগাভাগি করে নিয়েছে ১-১ ব্যবধানে। ঢাকায় খেলা দুই টেস্টই জিতেছে বাংলাদেশ, চট্টগ্রামে মেনে নিতে হয়েছে পরাজয়।
আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে মুস্তাফিজুর রহমান বলে গিয়েছিলেন টেস্ট জিততে তুলির আঁচড়টা দিতে হবে ব্যাটসম্যানদেরই। সেই জায়গাটায় পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। আর তাতেই হেরে গেছে বাংলাদেশ।
সকালেই নাথান লায়নকে ফিরিয়ে অজিদের ৩৭৭ রানে গুটিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। ব্যাট হাতে নেমে মাত্র ১৫৭ রানে অলআউট হয়ে টাইগাররা লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ৮৬ রানের। লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ১৬তম ওভারেই তিন উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে ক্যাঙ্গারুরা।
ম্যাচশেষে আর কিছু রান, এমনকি বাংলাদেশের আফসোসটা হতে পারে দেড়শো রানেরও! উইকেটের যেমন অবস্থা ছিল তাতে ১৫০-১৮০ রানের লক্ষ্য দিতে পারলেও হয়তোবা জয়টা আসতে পারতো টাইগার শিবিরে। হয়নি তেমনটা, সিরিজটা জিতে ইতিহাসটা আর গড়া হলোনা বাংলাদেশের। বিষাদে হরষ একটাই, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ ড্র।
সকালে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের জন্য বিভীষিকাটা ছিলেন সেই নাথান লায়নই। প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন সাতটি। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে গুণে গুণে নিয়েছেন ছয় উইকেট। স্বাগতিকদের বড় লিডের পথে তিনিই ছিলেন বাধা।
সাজঘরে ফেরার মিছিলটার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। দারুণ দুই চারে ইনিংস শুরু করেও প্যাট কামিন্সের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বিদায় সৌম্যের। নড়বড়ে তামিম ফিরেছেন লায়নকে সামনে এসে হাঁকাতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়ে।
ইমরুল কায়েস যথারীতি ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ফিরে গেছেন। আর দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশকে ভরসা দিতে পারেননি সাকিব আল হাসানও। লায়নের বলে ফিরেছেন বিশ্ব সেরা অলরাউন্ডার।
ব্যাটিং অর্ডারে উন্নত হয়ে চারে নেমে নাসির পারেননি বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে। ৪৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তখন ধুঁকছে। আগের ইনিংসের দুই ত্রাতা অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম আর সাব্বির রহমান আবারও রক্ষা করলেন টাইগারদের মান।
ফলোঅন এড়িয়েছেন ৫৪ রানের জুটিতে। বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন লিড। কিন্তু ২৪ রান করা সাব্বির হঠাৎই যেন হারালেন ধৈর্য। উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে হয়েছেন স্টাম্পড।
ক্যারিয়ার জুড়ে তিন-চারে খেলে যাওয়া মুমিনুল হকের দেখা মিলল আটে। মুশফিকের সঙ্গে জুটিতে স্পিন ভালো খেলছিলেন দুজন। স্টিভেন স্মিথ ফিরিয়ে আনলেন পেস। ভাঙল এই প্রতিরোধও। কামিন্সের অফ স্টাম্প ঘেঁষা বলে খোঁচা মারার লোভ সামলাতে পারলেন না মুশফিক। কাপ্তান ফিরেছেন ৩১ রানে।
লায়নের টানা দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারের পঞ্চম শিকারটা হয়েছেন মুমিনুল হক। ২৯ রান করে বেশ এগোতে থাকা মুমিনুলকে সুইপের ফাঁদে ফেলে ফিল্ডারের ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরের পথ দেখিয়েছেন লায়ন।
মিরাজদের প্রতিরোধ টেকেনি বেশিক্ষণ। লিডটা যখন ৮৫ রানের তখনই শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। ৮৬ রানের লক্ষ্যে মাঠে ব্যাট করতে নামার আগেই অতিথিরা অনেকটা নিশ্চিত জয় নিয়ে।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেই প্রথম ইনিংসে শতক হাঁকানো ওয়ার্নারকে এই ইনিংসেও ফিরিয়েছেন মুস্তাফিজ। মিরাজ বল করতে পারেননি কামিন্সের বাউন্সারে হাতে চোট পেয়ে।
তাইজুল শিকার করেছেন বিপক্ষ দলপতি স্টিভ স্মিথকে। আর ম্যাট রেনশোর উইকেট নিয়ে সাকিব পূর্ণ করেছেন চট্টগ্রামে ৫০তম টেস্ট উইকেটের চক্র।
নাথান লায়ন ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেয়েছেন আবার ডেভিড ওয়ার্নারের সাথে ভাগাভাগি করেছেন সিরিজ সেরার পুরস্কারও।
সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ডঃ
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩০৫
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৩৭৭
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৫৭/১০ (৭১.২ বল) মুশফিক ৩১, মুমিনুল ২৯, সাব্বির ২৪, ইমরুল ১৫, মিরাজ ১৪*, তামিম ১২, সৌম্য ৯, নাসির ৫, তাইজুল ৪, সাকিব ২, মুস্তাফিজ ০। লায়ন ৬/৬০, কামিন্স ২/২৭, ২/৪৯
অস্ট্রেলিয়া ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য- ৮৬) ৮৭/৩ (১৫.৩ ওভার) ম্যাক্সওয়েল ২৫*, রেনশ ২২, হ্যান্ডসকম ১৬*, স্মিথ ১৬, ওয়ার্নার ৮। মুস্তাফিজ ১/১৬, তাইজুল ১/২৬, সাকিব ১/৩৫,